Header Ads

অব্যক্ত প্রেমের কাহিনী (পর্ব-১)/Story of unspoken love (Part-1)

"অব্যক্ত প্রমের কাহিনী।" গল্পটা আমার বন্ধুর জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তব কাহিনী। একজন ছেলে যে কোনো মেয়েকে এতটা ভালবাসতে পারে তারই সাক্ষী হতে যাচ্ছে এই গল্পটা।


আমার বন্ধু রাজ(ছদ্মনাম)।  আকার আকৃতি ছোট খাটো আবার ছোট খাটোও বলা যায় না।  মাথার চুল সবসময় উপরে দিকে সোজা করে রাখে। সর্বপরি মানুষ হিসেবে রাজ অনেক ভালো একজন মানুষ আবার বন্ধু হিসেবে একদম প্রকৃত। রাজের অনেক প্রতিভা আছে বটে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিভা হলো ও অনেক ভালো ছবি উঠাতে পারে।  ওর বড় ভাই USA থেকে একটা ক্যামেরা গিফট করেছে সেটা চালানোর সব কায়দা ও খুব ভালো মতো রপ্ত করেছে। 

প্রতিদিন বিকেলে আমরা মৃত আব্দুল ( আব্দুল ভাইয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ ওনাকে জান্নাত দান করুন) ভাইয়ের চায়ের দোকানে আড্ডা দিতাম। মাঝে মাঝে আবার কোথাও ঘুরতে  যাই।

বর্ষায় নদীতে পানি আসছে। সকালে আমি আর রাজ বাসা থেকে বের হলাম নদীতে যাবো ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও ধারণ করতে। হঠাৎ মুশলধার বৃষ্টি শুরু হলো সাথে প্রচন্ড বাতাস বইছে। আমদের আর যাওয়া হলো না,  আব্দুল ভাইয়ের দোকানে বসে চায়ের কাপে সময় গুনতে থাকলাম কখন বৃষ্টি থামে। দূর তাকিয়ে দেখি একটা রিকশা আসছে।  দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি বাতাসের সাথে রিকশাটাও উড়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর রিকশা আব্দুল ভাইয়ের দোকানের সামনে এসে থামলো।  রিকশার ভেতর থেকে একটা মেয়ে নেমে দোকানের বারান্দায় এসে দাড়ালো।  এর আগে কখনো দেখি নাই।  মনে হচ্ছে ভদ্র এবং আশেপাশের কোনো বাসায় নতুন উঠছে। 

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো মেয়েটি রাজকে দেখার পর লম্বা করে সালাম দিয়ে বলছে ভাইয়া কেমন আছেন, ওদিকে রাজ খুব যত্নশীল ভংগীতে তার উত্তর দিচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে পূর্বপরিচিত।

মেয়েটার নাম তানিয়া ১ সপ্তাহ যাবত রাজদের বাসায় উঠেছে।

দেখতে বেশ সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়, খুব ভদ্র নিচু গলায় আস্তে আস্তে কথা বলে। ওর বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা। ১ মাস আগে ওনার এখানে পোস্টিং হইছে, ১ সপ্তাহ হলো পরিবার নিয়ে আসছে। চায়ের ফাকে এক ঘন্টা গল্প করার পর বৃষ্টি থামলো।  সে দিন আমাদের আর ভিডিও ধারণ করা হলো না।


কয়েকদিন যাবত লক্ষ্য করছি আড্ডার মাঝে প্রায়ই রাজ তানিয়ার গুণ গাওয়া শুরু করে দেয়।  আজও তাই করতেছে, আমি ওরে থামিয়ে দিয়ে বললাম বন্ধু তুই তো গোল্লায় গেছিস। রাজ রেগে মেগে বলে গোল্লায় গেছি মানে?  মানে বন্ধু তুই তানিয়ার প্রেমে পড়ছিস। কয়েকজন তো প্রচুর পরিমানে খেপাতে থাকলো। রাজও বাচ্চাদের মতো খেপে গেলো। সে দিন আড্ডাটা খুব তারাতাড়ি শেষ  হয়ে যায়। আমি আর রাজ দুজন হেটে হেটে বাসায় ফিরছি। লক্ষ্য করলাম রাজের মন খারাপ। আমি জানি কি করলে ওর মন ভালো হবে, আর দেরি না করে পূর্বের টেকনিক কাজে লাগিয়ে মন ভালো করে দিলাম। 

 আমাদের দুজনের বাসা পাশাপাশি। বাসার কাছাকাছি আসতেই বিদ্যুৎ চলে যায়। মনে হয় বিদ্যুৎ লাইনে কোনো সমস্যা হইছে।বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা আর বাসার ভিতর গেলাম না। বাসার সামনে বসে বিভিন্ন আজাইরা টপিক নিয়ে কথা বলছি। 

বারবার একটা টর্চের আলো আমাদের চোখে এসে পরছে। আমারা বুঝতে পারছি এই টর্চের আলো রাজদের বাসার ছাদ থেকে কেউ ইচ্ছে করে আমাদের চোখে মারছে। আমরা বাসার দিকে এগিয়ে গেলাম কাছাকাছি এসে ভালো ভাবে লক্ষ্য করে দেখি একটা বাচ্চা ছেলে, বয়স আনুমানিক ৯-১০ হবে। পাশে  তানিয়া দাঁড়িয়ে আছে।  তানিয়া আমাদের দেখা মাত্রই সালাম দিল,  আমি সালামের উত্তর দিয়ে জানতে চাইলাম ছেলেটা কে?

তানিয়া খুব ধীর কন্ঠে বলছে,  আমার ছোট ভাই, বেশ দুষ্ট হয়েছে। রাজ তানিয়াকে খুশি করার জন্য বল্লো, না ঠিক আছে এ বয়সে দুষ্টুমি করবে না তো কোন বয়সে করবে। এই বয়সে দুষ্টুমি না করলে ব্রেইনের বিকাশ ধীরে ঘটে।  

তানিয়াও তাকে খুশি করে দিয়ে বল্লো,  আপনি ঠিকই বলেছেন ভাইয়া। এরমধ্যে তানিয়া আমাদের ছাদে যাওয়া জন্য বল্লো।  আমি রাজকে বললাম চল ছাদে গিয়ে কিছুক্ষন গল্প করে আসি কিন্তু রাজ  যেতে রাজি হলো না। আমি বললাম সংকুচের কি আছে বাসাটা তোদের এবং ছাদটাও। এর মাঝে বিদ্যুৎ চলে আসছে যে যার বাসায় ঢুকে গেলাম। 

রাজ আর তানিয়ার মাঝে ভাবের আদান-প্রদান হতে থাকে। তানিয়ার প্রতি রাজের দূর্বলতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। একপর্যায়ে এতোটাই দূর্বল হয়ে যায় যে এক মুহূর্ত অদেখায় থাকতে পারে না। 

আমি আর রাজ অনেক ঘুরাঘুরি করবো,  কারণ প্রায় ১ বছর আগে আমি রাশিয়ায় স্কলারশিপের অন্য আবেদন করেছিলাম, স্কলারশিপটা পেয়ে গেছি এবং পরশু আমি চলে যাবো। সারাদিন বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে সন্ধ্যায় আবার আব্দুল ভাইয়ের দোকানে বসে অনেক রাত পর্যন্ত আড্ডা দেই। রজকে তানিয়ার ব্যাপারে তানিয়াকে সবকিছু বলেতে বলি। রাজ বল্লো না, আর কিছু দিন যাক তারপর তানিয়াকে প্রপোজ করবো।  আমি বললাম বেশি দেরি না করে যত তারাতাড়ি বলা যায় বলে দে। তানাহলে দেখবি অন্য কেউ নিয়ে চলে গেছে। রাজ বলছে যদি প্রপোজাল ফিরিয়ে দেয়! তখন আমি ওর সামনেও যেতে পারবো না। তাই ভয় হচ্ছে। আমি ওর কাধের উপর হাত রেখে বললাম তানিয়া তর প্রপোজাল ফিরিয়ে দিবে না। 

সকালে থেকে আমি খুব ব্যাস্ত সময় পার করছি,  কাল রাশিয়া চলে যাবো তাই সবরকম প্রস্তুতি নিচ্ছি। দুপুর পর রাজদের বাসায় গেলাম আন্টি আংকেলের সাথে দেখা করে বিদায় নেয়ার জন্য। সবার সাথে দেখা হলো,  সবাই আমাকে কিছু উপদেশ দিলেন।

রাজে রুমে শুয়ে আছে বিকেল পর্যন্ত আমরা ওর রুমেই গল্প করালাম। তানিয়াকে যেনো ও সবকিছু তারাতাড়ি বলে এই বলে ওর কাছ থেকেও বিদায় নিলাম।

চলবে.................


[বিঃদ্রঃ পর্ব-১ শুধু পরিচয় পর্ব দিয়েই শেষ করছি। ২য় পর্ব থেকে শুরু হবে রাজ তানিয়ার অব্যক্ত প্রেমের কাহিনী।  সাথে থাকার অনুরোধ রইলো। ]

No comments

If you have any doubts. Please let me know.

Powered by Blogger.